প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হাইফায় যখন অবরোধ চলছিল তখন অনেক বেসামরিক নাগরিকের জীবন হুমকির মুখে পড়েছিল, তখন ‘আবদুল-বাহা তাদের অনাহারে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিজ উদ্যোগে টিবেরিয়াসের কাছে ব্যাপকভাবে কৃষিকাজ পরিচালনা করেছিলেন এবং সেখান থেকে প্রচুর গম উৎপাদন করেছিলেন । সেই খাদ্যশষ্যগুলি ভূগর্ভস্থ গুদাম ঘরে এবং অন্যান্য স্থানে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এই খাদ্য শষ্য তিনি জাতি,ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল অধিবাসীদের মধ্যে বিতরণ করেছিলেন। খাবারগুলি খুবই পরিকল্পিত করে পদ্ধতিগতভাবে সরবরাহ করা হয়েছিল। ১৯১২সালের প্রথম দিকে তাঁর এই প্রস্তুতি শুরু করার কারণে, তিনি ১৯১৭ এবং ১৯১৮ সালের অন্ধকার দিনগুলির মর্মান্তিক গণমৃত্যু এড়াতে পেরেছিলেন।
যুদ্ধের শেষে ব্রিটিশরা অতি শীঘ্রই আব্দুল বাহার এই কষ্টসাধ্য কৃতিত্বকে অনুধাবন করতে পেরেছিল। সে কারণে ১৯২০ সালের ২৭ এপ্রিল হাইফায় ব্রিটিশ গভর্নরের বাসভবনে আব্দুল বাহার জন্য বিশেষভাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ব্রিটিশ এবং ধর্মীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই শুভ অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁর নিঃস্বার্থ কাজ, সমাজের উচু এবং নীচু সকল স্তরের মানুষের ভালবাসা এবং সম্মান অর্জন করে। ‘আবদুল-বাহা নাইটহুড গ্রহণ করতে সম্মত হন-কিন্তু তিনি পার্থিব সম্মান বা জাঁকজমক অনুষ্ঠানে খুশি হতে পারেন নাই। তাঁর ইচ্ছা আনুষ্ঠানিকতাও সাধারণ মানের হতে হবে। তাঁকে গভর্নরের বাসভবনে আনার জন্য একটি চমৎকার গাড়ি পাঠানো হয়, কিন্তু চালক মাষ্টারের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে খুঁজে পেল না। মানুষ তাঁকে খোঁজাখুঁজি করতে চারিদিকে ছোটাছুটি শুরু করে দিল। অবশেষে হঠাৎ তিনি অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হলেন …..। একাকী, তাঁর সেই রাজকীয় পদচারণা, সেই সরলতার সাথে যা সর্বদা তাঁকে পরিবেষ্টন করে রাখে। ….
ইসফান্দিয়ার, তাঁর দীর্ঘকালের বিশ্বস্ত ভৃত্য, হাতের কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি তার জীবনের অনেক সময় মাস্টারের সাথে তাঁর ভালবাসার কাজগুলিতে একসাথে ছিলেন। হঠাৎ সে সময়, চমৎকার সেই গাড়ীটি মাস্টারকে গভর্নরের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, তিনি তাতে দু:খিত হলেন এবং নিজের উপস্থিতিকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করলেন। স্বতস্ফূর্তভাবে, ‘আবদুল-বাহা নিশ্চয়ই এটি অনুভব করেছেন- সে কারণে তিনি তাকে একটি ইশারা দিলেন। ইসফান্দিয়ার চমকে গেলেন – ঘোড়া গাড়িতে জুড়ানো হল, গাড়িটি নীচের গেটে আনা হল এবং মাস্টারকে গভর্নরের বাগানের প্রবেশদ্বারে নিয়ে যাওয়া হল। ইসফান্দিয়ার আনন্দিত হলেন – তিনি বুঝতে পারলেন তার এখনও প্রয়োজন আছে। চুপচাপ, আড়ম্বর ছাড়াই, আব্বাস এফেন্দি সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় এসেছিলেন এবং যারা তাঁকে সন্মান দেখিয়েছিলেন তিনিও তাদের সন্মান দেখিয়েছিলেন। কিন্তু আব্দুল বাহা জীবনে কখনোই স্যার উপাধিটি ব্যবহার করেননি।
(যাঁরা নাইট উপাধিতে ভূষিত হন তাঁদেরকে স্যার বলে সম্বোধন করা হয়।)
অনুবাদ- মিঃ রুহুল আমিন
(Vignettes from the Life of ‘ABDU’L-BAHÁ,Collected and edited by Annamarie Honnold) Story No. 19)
ছবি-১ আব্দুল বাহাকে নাইট উপাধিতে ভুষিত করণের অনুষ্ঠানের ছবি।