যে লোক তেহরান শহরকে তার প্রতিক দিল, সে কেন আজ তেহরানে যেতে পারে না?

যুবক হুসেইন আমানত
যুবক হুসেইন আমানত তার সৃষ্টির সামনে

প্যারিস শহরের নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে আইফেল টাওয়ারের ছবি, আগ্রা মানে তাজ মহল, ঢাকার প্রতিক এখন হয়ে উঠেছে সাভারের স্মৃতিসৌধ। ঠিক তেমনই ইরানের রাজধানী তেহরানের পরিচয় বহন করে বুরুজ ই আযাদি।

কিন্তু আপনি কি জানেন যে সেই বিশ্ব বিখ্যাত স্থাপত্যের স্রষ্টা আজ তার প্রিয় মাতৃভূমিতে পা রাখতে পারেন না?

এই প্রতিবেদনে আমি আপনাদেরকে এই গল্পটাই বলব।

হুসেইন আমানতের জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান। তিনি সেখানেই মানদেগার আলবুরুজ হাই স্কুল এবং তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষকরা স্থাপত্য বিভাগের ছাত্রদেরকে প্রায়ই ইরানের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান এবং ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোতে নিয়ে যেতেন, যেখানে তারা সেই সকল স্থানের ছবি আঁকতেন। এই ভাবে তাদের মধ্যে ইরানের প্রাগ ইসলামীক এবং ইসলামী স্থাপত্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্মায়।

১৯৬০এর দশকের শেষের দিকে যখন হুসেইন আমানত তার পড়াশোনা শেষ করলেন তখন তার বয়স ছিল ২৪। সেই সময় ইরানে সম্রাট রেজা শাহ পাহলভী তার ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন এবং ইরান, বা কম পক্ষে তার বড় শহরগুলো পেট্রোডলারে ভাসছে। তখন শাহেনশাহ (রাজাধিরাজ) রেজা শাহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে অত্যন্ত জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে ইরানের রাজতন্ত্রের ২৫০০ বছর পূর্তি পালন করা হবে।

ইরানের প্রচীন রাজধানী পারসিপলিস মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বিশ্বের সকল রাজন্যবর্গ, সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের এক রাতের অবস্থানের জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যায় করে একটি শহর তৈরি করা হয়।

এই সব ছাড়াও, সম্রাট আদেশ দিলেন যে এই ঘটনাকে চিরকালের জন্য স্মরণীয় করে রাখার জন্য রাজধানী তেহরানের কেন্দ্রে একটি সৌধ নির্মাণ করা হবে যার নাম হবে “শাহ ইয়াদ” অর্থাৎ “রাজার স্মৃতি”।

হুসেইন আমানত কানাডায়
হুসেইন আমানত কানাডায় তার কর্মস্থলে

সেই স্মৃতি সৌধ নির্মাণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যাতে সারা বিশ্বের সেরা স্থাপত্যবিদরা অংশগ্রহণ করেন।

হুসেইন আমানত মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বের হয়েছেন, স্থপতি হিসেবে তাকে কেউ চিনেও না, এখনো চিন্তা ভাবনা করছেন যে ভবিষ্যতে কি করবেন, হাতে অনেক সময়। খবরের কাগজে এই প্রতিযোগিতার ঘোষনা দেখলেন আর চিন্তা না করেই নিজের নাম দিয়ে দিলেন!

তার পরে দুই মাস আমানত একটার পর একটা নকশা তৈরি করছেন আর ছিঁড়ে ফেলছেন। কোনটাই তার মনের মত হচ্ছে না। ডিজাইন জমা দেয়ার শেষ তারিখের মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি তার মনের মত মত একটি নকশা তৈরি করতে সক্ষম হোন এবং তা কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিয়ে দেন।

বুরুজ ই আজাদি
বুরুজ ই আজাদি

তার এই ডিজাইন তৈরিতে তার ছাত্র অবস্থায় ইরানের বিভিন্ন প্রাগ ইসলামীক ও ইসলাম পরবর্তী যুগের স্থাপত্য কলার নিদর্শনের পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগে। তিনি আকামেনিড ও সাসানি যুগ এবং ইসলামী আমলের শিরাজ ও ইসপাহানের অপুর্ব সুন্দর মসজিদগুলো থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেন এবং তাতে একটি ভবিষ্যৎ মূখি আধুনিক ইরানের চিত্র ফুটিয়ে তোলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা হুসেইন আমানত কল্পনাও করেন নাই যে তার নকশা বিশ্বের নামকরা স্থাপত্যবিদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে যাবে এবং স্বয়ং রেজা শাহ তা অনুমোদন করবেন।

নকশার অনুমোদন তার সামনে যে সকল চ্যালেন্জ আসে তার সূচনা ছিল মাত্র। তাকে প্রত্যেকটি ধাপে ইরানের দূর্নীতিগ্রস্থ সরকারি আমলাদের মুকাবেলা করতে হয়। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে এই প্রকল্পের সমস্ত কাজ ইরানের প্রকৌশলীরাই করবে, কিন্তু এতো বড় কাজের একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের সহায়তা অপরিহার্য ছিল। তাই তিনি সদ্য সমাপ্ত সিডনি অপেরা হাউস যে প্রতিষ্ঠান করে ছিল তাদের সাথে যোগাযোগ করলেন। ইরানের এই কাজের কোন সংস্থার অভিজ্ঞতা না থাকার সত্তেও অনেকেই সরকারকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে হুসেইন আমানত ইরানি প্রকৌশলীদেরকে সু্যোগ না দিয়ে বিদেশিদেরকে কাজ দিচ্ছেন। অপর দিকে আরো মজার বিষয় হলো যে সিডনি অপেরা হাউসের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও প্রথমে বিশ্বাস করতে চায় নাই যে এশিয়ার একটি অজ্ঞাত প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান একজন যবুক, তারা সত্যসতিই এমন‌ একটি প্রকল্প করতে যাচ্ছে। সব বাধা পেরিয়ে এই প্রকল্প ১১ নভেম্বর ১৯৬৯এ শুরু হয়ে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১এ শেষ হয়। ৫০,০০০  বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই সৌধের উচ্চতা ৪৮ মিটার।

হুসেইন আমানতের নকশা করা বানিজ্যিক ভবন
আমেরিকায় হুসেইন আমানতের নকশা করা একটি বানিজ্যিক ভবন

নির্মাণের পরপরই তা ইরান বিশেষ করে তেহরান বাসিদের জন্য গর্বের একটি নিদর্শনে হয়ে যায়। কিন্তু একই সময় তখন ইরানের মানুষ শাহ এর পশ্চিম ঘেঁষা নীতি, তার সরকারের আমলাদের অবাধ দূর্নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে। সারা দেশে সরকার বিরোধী প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ হতে লাগলো। তেহরানে এই জাতীয় সভা সমাবেশের জন্য জনগনের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠল নতুন ইরানের প্রতিক ঐ স্মৃতি সৌধ।

এর মধ্যে এই সৌধকে বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার একটি ষড়যন্ত্রও ধরা পড়ে। সরকার বিরোধী একটি দলকে সৌধের ভূগর্ভস্থ পাওয়ার হাউসে হাতে নাতে ধরা হয়। তাদের নেতৃত্বে ছিল পরবর্তীতে খুমেইনি সরকারের প্রধান মন্ত্রী মুহাম্মদ আলী রেজাঈ।

১৯৭৯এ যখন খমেইনিরা ক্ষমতায় আসে তখন এই সৌধের নাম পরিবর্তন করে বুরুজ আযাদি অর্থাৎ মুক্তির মিনার রাখা হয়। কিন্তু হুসেইন আমানতের এই শৈল্পিক কর্ম আজও যে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য সমাবত হওয়ার জন্য তেহরানের মানুষের প্রথম পছন্দ্, সেই প্রতিবাদ হোক ইরান-ইরাকের অর্থহীন যুদ্ধ, মাহমুদ আহমেদ ই নিজাদ, বা ইরানে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত সরকার বিরোধী প্রতিবাদ।

১৯৭৯এর পটপরিবর্তন হুসেইন‌ আমানত এবং তার মত ইরানের লক্ষ লক্ষ বাহাই ধর্মাবলম্বীদের জন্য চরম দুর্ভোগে বয়ে নিয়ে আসে। বাহাই সম্প্রদায় যা ১৮৪৪এ তার সূচনা থেকেই পুনারাবৃত্ত  নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার ছিল, এই বার প্রথমবারের মতো সরাসরি ও ঘোষিত ভাবে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মুখোমুখি হয়। তাদের ধর্ম বিশ্বাসের কারণে তাদের সমস্ত নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হলো। অনেক দেশে আমরা শুনি যে কোনো বিশেষ সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠীকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করা হয়, কিন্তু সম্ভবত এটা ইতিহাসে প্রথম বারের মত কোন এক শ্রেণীর মানুষকে সাংবিধানিক ভাবে “অস্তিত্বহীন” ঘোষণা করা হয়। এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ইরানের সর্ব বৃহৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে,  যাদের সংখ্যা ইরানের অনান্য সকল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সম্মেলিত সংখ্যার চেয়ে বেশি।

এই জাতীয় বৈষম্যের ফলে বাহাইরা তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, স্কুল, কলেজ সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়, সরকারি চাকরির দরজা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। নাগরিক হিসেবে তাদের কোন অধিকার না থাকার ফলে তাদের বিরুদ্ধে যে কোন অপরাধ সংঘটিত করার পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। ১৯৭৯এর পরিবর্তনের দুই বছরের মধ্যে দুই শতাধিক বাহাইদেরকে ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়, তাদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সের মেয়ে থেকে আরম্ভ করে ৮০ বছরের বৃদ্ধরাও ছিল।

হাজার হাজার বাহাই তাদের সব কিছু ত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। তাদের মধ্যে হুসেইন আমানতও ছিলেন। তিনি প্রথমে ইংল্যান্ডে যান পরবর্তীতে কানাডায় স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন।

চরমপন্থীরা যারা এই স্মৃতি স্তম্ভকে তার নির্মাণাধীন অবস্থাতেই ধ্বংস করে দিতে চেয়ে ছিল, ক্ষমতায় আসার পর আবার তা গড়িয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কেননা তারা শাহ্এর আমলের সব কিছুকে ভেঙ্গে ফেল ছিল, এমনকি তারা শাহের পিতার বাসভবনকেও ভেঙ্গে সেই স্থানে একটি গণশৌচাগার বানিয়ে ফেলে। একই ভাবে তারা সারা দেশে বাহাই কেন্দ্র, কবরস্থান ও অনান্য বাহাই সম্পত্তি দখল করে নেয়।

শাহ ইয়াদকে ভেঙ্গে ফেলার জন্য তো তাদের কাছে দুইটি “যুক্তি” ছিল। প্রথমত এটা শাহ এর আমলে এবং তার আদেশে নির্মিত হয়েছিল, দ্বিতীয়ত এই সৌধের পরিকল্পনাকারী ও নির্মাতা ছিল একজন বাহাই।

কিন্তু এতো দিনে এই স্মৃতিসৌধ নিছক কনক্রেটের ও ইস্পাতের একটি কাঠামো থেকে ইরানের জনগনের সুন্দর ভবিষ্যতের আশার প্রতিক হয়ে গেছে। তাই সরকার তার নাম পরিবর্তনের বেশি কিছু করতে পারে নাই।

হুসেইন আমানত লন্ডনের দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে যদিও এই প্রকল্পের উদ্যগতা ছিল শাহ এর সরকার কিন্তু তিনি তার নকশায় ইরানের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন। যার মধ্যে ইরানের গৌরবউজ্জ্বল প্রাক ইসলামিক ও ইসলামী সংস্কৃতির সম্মেলন স্পষ্ট। ইরানের জনগনের ভালবাসা যা এটা ভাঙ্গতে দেয় নাই তা হুসেইন আমানতের কথার সাক্ষী।

কার্মেল পর্বতে হুসেইন আমানত কর্তৃক নির্মিত কয়েকটি ভবন
কার্মেল পর্বতে হুসেইন আমানত কর্তৃক নির্মিত কয়েকটি ভবন

কানাডায় স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করার পরে তিনি তার নিজের আর্কিটেকচার ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইউরোপ, আমেরিকা ও অনান্য দেশে অনেক বানিজ্যিক প্রকল্প হাতে নেন। কিন্তু তার বেশির ভাগ শ্রম, সময় ও মেধা তিনি বাহাই বিশ্ব কেন্দ্রে বিভিন্ন নির্মাণ কাজে ব্যায় করেন।

বাহাই বিশ্ব কেন্দ্রে, কার্মেল পর্বতে  বাহাই বিশ্ব কেন্দ্রের পাঁচটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের কাজে তিনি ইরানে থাকতেই জড়িত ছিলেন। এই পাঁচটি ভবনের মধ্যে অন্যতম হলো বাহাইদের বিশ্ব পরিচালনা পরিষদ সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়ের ভবন। এই ভবন‌গুলোর‌ মধ্যে শুধু মাত্র একটি ধর্মের অভিভাবক শৌগি এফেন্দির সময় সম্পন্ন হয়েছিল। স্থাপত্য বিষয়ক একটি জার্নালের প্রতিনিধি যখন হুসেইন আমানতকে প্রশ্ন করল যে আর্ক নামে পরিচিত এই ভবনগুলো প্রাচীন গ্রিক পারথিনন ভবনের আদলে কেন তৈরি করা হয়েছে, তখন তিনি উত্তর দেন যে শৌগি এফেন্দির এই ষ্টাইল পছন্দ করার পিছনে যুক্তি ছিল যে, যে নির্মাণ শৈলী আড়াই হাজার বছর পার হয়ে যাওয়ার পর এবং মানুষের রুচি ব্যাপক পরিবর্তনের পরেও তার সৌন্দর্য হারায় নাই তা আরো অনেক শতাব্দী ধরে সেকেলে হবে না। বেশির ভাগ ঐতিহাসিক ভবনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই তারা তাদের আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে।

রাতের বুরুজ ই আজাদি
রাতের বুরুজ ই আজাদি

আর্ক ভবনের পরে সম্প্রতি তাকে বাহাউল্লাহর পুত্র ও তাঁর পরে বাহাই ধর্মের কেন্দ্র আব্দুল-বাহা’র সমাধী সৌধ নির্মাণের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তিনি জানান যে এই সমাধির নকশা ধর্মের ইতিহাসে আব্দুল-বাহা’র অনন্য স্থানকে প্রতিফলিত করবে, অর্থাৎ তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা এবং একই সাথে তাঁর নম্রতা।

হুসেইন আমানত যিনি ইরানে থাকলে তার প্রিয় মাতৃভূমিকে অনেক সমৃদ্ধ করতে পারতেন, আজও সেই দেশে তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি রয়েছে। কিন্তু তার একমাত্র দুঃখ হলো যে তার সন্তানরা ঠিক মত ফার্সি ভাষা পড়তে পারে না এবং তার হাতে গড়া বুরুজ ই আজাদি দেখতে পারে না।

লেখক: মাহমুদুল হক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top